শুক্রবার, ০৪ Jul ২০২৫, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ৯ মাসেও রিপোর্ট দিতে পারেনি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন কমিটি। রিপোর্ট দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে দুই দফা তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট না পাওয়ায় এ খাতের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই রাঘববোয়ালরা আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন উপায়ে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লুটেপুটে খেয়েছে। এদের কেউ কেউ দেশ থেকে টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুরের অন্যতম শীর্ষ ধনীর তকমাও পেয়েছেন।
২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করা হয়। এটি করা হয় আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে। সে আইন গত বছর বাতিল করে সরকার। কিন্তু এরপরও কোনো সুফল মেলেনি। অন্যদিকে ১৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নথি চেয়েও পায়নি দুদক। ফলে এ খাতের রাঘববোয়ালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে শেখ হসিনার সরকার ২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করে। শুরু থেকেই এ আইনকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ‘ইনডেমনিটি আইন’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর তীব্র সমালোচনা করেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উপস্থাপন করা যাবে নাÑআইনের এই বিধান নিয়েই ছিল বেশি সমালোচনা। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আইনটি শুধু সংবিধানবিরোধীই নয়, মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। এ আইনের ক্ষমতাবলে বিগত সরকার ও আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশেষ এ আইন জারির পরপরই তিন বছর মেয়াদি ১৭টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর পাঁচ বছর মেয়াদি আরো কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে চালু থাকা ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৬২টি সরকারি এবং ৮১টি বেসরকারি। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।
গত বছরের ১৮ আগস্ট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ইনডেমনিটি আইন স্থগিত করে সরকারের প্রতি রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলের শুনানি শেষে ১৪ নভেম্বর আইনের দুটি বিধান অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় দেয় হাইকোর্ট। ৩০ নভেম্বর পুরো আইনটি বাতিল করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। আইন বাতিলের পর প্রায় সাত মাস পার হলেও এর সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। আইন ও প্রথা ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতি ছাড়াই আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তোলা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
৯ মাসেও রিপোর্ট তৈরি হয়নি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সরকার গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন—বুয়েটের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আলী আশফাক, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোশতাক খান। কমিটিকে যে কোনো সূত্র থেকে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করা, সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে তলব করা এবং বিশেষ আইনের (ইনডেমনিটি) আওতায় করা চুক্তিগুলোয় দেশের স্বার্থরক্ষা হয়েছে কি না, তা নিরীক্ষা করার পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়।
এ কমিটির বয়স প্রায় ৯ মাস হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রিপোর্ট তৈরি করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে গঠিত কমিটিকে ইতোমধ্যে দুই দফা চিঠি দিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির কার্যক্রম ও রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এত পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে যে, চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে আরো সময় লাগবে। যাচাই-বাছাই চলছে।
এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কত দিন সময় লাগতে পারে—জবাবে বিচারপতি মইনুল বলেন, আমরা কাজ করছি। আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির অপর এক সদস্য আমার দেশকে জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তির সব নথি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ব্যক্তিগত নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়, পাওয়ার পারসেজ অ্যাগ্রিমেন্ট ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্টসহ (পিপিএ) সম্পাদিত সব চুক্তি ও চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমোদন এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুকূলে পরিশোধকৃত বিল ও বকেয়া বিলসংক্রান্ত তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য তথ্যউপাত্তসহ এগুলো পর্যালোচনা, মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ সম্পন্ন করে রিপোর্ট তৈরি করতে একটু সময় লাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি
হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে গত ১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, যা দিয়ে তিন-চারটি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত। এ দুর্নীতি হয়েছে মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কমিশন এবং কেন্দ্র ভাড়া ও অতিরিক্ত মুনাফা করার মাধ্যমে।
এসব দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ওই আমলে (হাসিনার আমল) দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরাসরি লুট করা হয়। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুট করা হয় এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ভারতের আদানির ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্রাতিরিক্ত দামে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় অত্যন্ত গোপনে।
গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার দেশকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে মোট খরচ করা হয় দুই হাজার ৮৩০ কোটি ডলার, বর্তমান বিনিময়হারে যা প্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি।
ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ লুটের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, লুটপাটে জড়িত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সামিট গ্রুপ নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে সাত হাজার ৯৩২ কোটি, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে সাত হাজার ৫২৩ কোটি, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ছয় হাজার ৫৭৫ কোটি এবং আরপিসিএল নিয়েছে পাঁচ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। হাসিনার সরকার আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরের ৫০ শীর্ষ ধনী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পান। ওই তালিকায় তিনি ছিলেন ৪১তম অবস্থানে। তথ্যানুযায়ী, সে সময় আজিজ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল এক দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, হাসিনা সরকারের আমলে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিল সামিট গ্রুপ। তারা বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক, আবাসন ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে কাজ করে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, হাসিনার সরকার শুধু সামিট গ্রুপকে বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছে।
রাঘববোয়ালরা অধরা
হাসিনার পলায়নের পর প্রায় ১০ মাস পার হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাঘববোয়ালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের আমলের এ খাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম আমার দেশকে বলেন, এ খাতকে বিগত সরকার অর্থ লুটের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের আমলা, রাজনীতিবিদ, দেশি-বিদেশি অনেক সুবিধাভোগী এবং ওই সরকারের ঘনিষ্ঠরা এ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল। সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্র আগের অবস্থায়ই রয়েছে। দুর্নীতিবাজ এ আমলাতন্ত্র দিয়ে কোনোভাবেই দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারার জন্য সরকারকে দায়ী করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম আরো বলেন, আমরা লিখিতভাবে বহু নথি সরকারের কাছে দিয়েছি। সরকার এখন পর্যন্ত একটি মামলা কিংবা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগও আনতে পারেনি। এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের নথি পায়নি দুদক
১৫৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতির ১৭২টি নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে পাঁচজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেছে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং বিদ্যুৎ খাতের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নথিগুলো তলব করা হয়।
কোন ধরনের নথি তলব করা হয়েছে এবং তদন্তের অগ্রগতি কতদূরÑসে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আক্তারুল ইসলামের কাছে। তিনি আমার দেশকে বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়, তার বেশিরভাগই বেসরকারি মালিকানাধীন। ওই সব কেন্দ্রের বিষয়ে ঘুস গ্রহণ, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন, সরকারি জমি দখল এবং ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ব্যাংকঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি, ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্টসহ সব ধরনের চুক্তির কপি, চুক্তির অনুমোদনসংক্রান্ত তথ্য এবং এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুকূলে পরিশোধিত বিল ও বকেয়া বিলের নথি দিতে বলা হয়েছে।
তবে দুদকের অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত তো অনেক দূরের বিষয়, এখনো সব নথি এসে জমা হয়নি।
দুদকে নথি দেওয়ার বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল করিম আমার দেশকে বলেন, যেসব নথি দুদক চেয়েছে, আমরা যথাসময়ে সেগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি।
বিচারপতি মইনুল নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান জানান, আমরা প্রয়োজনীয় সব নথি কমিটির কাছে দিয়েছি। আশা করছি শিগগির প্রতিবেদন পেয়ে যাব।
বিগত সরকারের আমালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, বিগত সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমান সরকার বিশেষ আইনটি বাতিল করলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সাহস ও সক্ষমতার অভাবে। কারণ ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে দেশে ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হবে। তাতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সরকার হয়তো এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুর্নীতি ও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট হয়েছে, সরকার অন্ততপক্ষে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করতে পারত। এখন আমাদের বিচারপতি মইনুল ইসলামের কমিটির রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রতিবেদনের অপেক্ষায় সরকার
দশ মাস পার হয়ে গেলেও বিগত সরকারের আমলের দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন—এমন প্রশ্ন করা হয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাউজুল কবির খানকে। জবাবে আমার দেশকে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে দেই। কমিটিকে সব ধরনের নথি ও তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করা হয়েছে। কমিটি এগুলো পর্যালোচনা করছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন পাব। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।